ইবাদত (দ্বিতীয় অধ্যায়)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা | NCTB BOOK
619

আল্লাহ তায়ালার দাসত্ব স্বীকার করাকে ইবাদত বলে। আল্লাহর সকল আদেশ-নিষেধ, বিধিবিধান মেনে চলার নামই ইবাদত। পরকালের শান্তির জন্য মানুষ সালাত, সাওম ইত্যাদি পালন করে থাকে। দুনিয়ার প্রত্যেকটি কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করাও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

  • ইবাদতের ধারণা, তাৎপর্য ও প্রকারভেদ বর্ণনা করতে পারব।
  • পবিত্রতা ও অপবিত্রতার ধারণা ও পবিত্র থাকার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করতে পারব।
  • পবিত্র হওয়ার উপায় বর্ণনা করতে পারব।
  • সালাত (নামায) আদায়ের নিয়মকানুন, সময়সূচি ও সালাতের ফরজ, ওয়াজিব ইত্যাদি সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারব।
  • সালাত (নামায) ভঙ্গের কারণ বর্ণনা করতে পারব।
  • সিজদাহ্ সাহু ও সিজদাহ্ তিলাওয়াতের ধারণা ও প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করতে পারব।
  • বাস্তব জীবনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, নিয়মানুবর্তিতা ও সাম্যের শিক্ষা অর্জনে সালাতের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারব।
Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

সিয়াম ওযু করে মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করে। সালাত শেষ করার পর তার খেয়াল হলো সে ওযু করার সময় মাথা মাসেহ করেনি।

উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

শিক্ষক আসলামকে বললেন সে যেন মসজিদে গিয়ে সময়মতো নামায পড়ে। তিনি আরও বললেন যে, কিছু সময় সালাত আদায় করা নিষেধ আবার কিছু সময় মাকরুহ।

আল্লাহর
মহানবি (স.)-এর
সাহাবিদের
মনীষীদের.
উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

হাদিস : 'যে ব্যক্তি নামাযের হেফাজত করবে না কিয়ামতের দিন তার জন্য নামায নূর, দলিল ও নাজাত হবে না। তার হাশর হবে কারুন, ফেরাউন, হামান ও উবাই ইবন খলফের সঙ্গে।'

ইবাদতের ধারণা ও তাৎপর্য (পাঠ ১)

525

ইবাদত (عِبَادَة) আরবি শব্দ। এর অর্থ আনুগত্য করা। আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যই হলো ইবাদত। ইসলামি পরিভাষায়-আল্লাহর সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নামই ইবাদত। সালাত, সাওম, যাকাত, হজ, ইত্যাদি যেমন ইবাদত, তেমনি জীবনের প্রতিটি কাজ ইসলামি বিধিবিধান অনুযায়ী পালন করাও ইবাদত।
মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আমাদের লালনপালন করেন। তিনিই আমাদের রব। আমরা তার বান্দা। আমাদের জীবনমরণ তার হাতে। তিনি আমাদের জন্য এ মহাবিশ্বকে কত সুন্দর করে সাজিয়েছেন। আসমান জমিন, চাঁদ, সুরুজ, ফুল, ফল, নদীনালা সব আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আমরা সব ভোগ করি। আমাদের সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছেন। আল্লাহর দেওয়া অফুরন্ত নিয়ামত ভোগ করার পর এর শুকরিয়া (কৃতজ্ঞতা) আদায় করতে হবে। নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে আল্লাহর দেওয়া বিধানমতো চলার নামই ইবাদত। আমরা আল্লাহর আদেশমতো চলব এবং তারই ইবাদত করব।

মহান আল্লাহ সকল জিনিস মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত বা দাসত্ব স্বীকার করার জন্য। এ সম্পর্কে কুরআন মজিদে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন-

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

অর্থ: "আর আমি জিন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।" (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬)
মহানবি (স.) ইবাদত সম্পর্কে বলেছেন, 'যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করে চল। আর কখনো কোনো মন্দ কাজ হয়ে গেলে তখনি একটি ভালো কাজ করে ফেল। তাহলে এ কাজটি পূর্ববর্তী মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেবে। আর মানুষের সাথে উত্তম আচরণ কর।' (তিরমিযি)

আমরা ভালো কাজ করব। অন্যকে সৎকাজের পরামর্শ দেবো। এতে উভয়ই সমান সাওয়াব পাব। এ প্রসঙ্গে মহানবি (স.) বলেন, 'যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের পরামর্শ বা সন্ধান দেবে, সে ঐ কাজটি সম্পাদনকারীর সমান সাওয়াব পাবে।' (মুসলিম)। আমাদের জন্য নামায, রোযা, হজ, যাকাত ইত্যাদি কতগুলো নির্ধারিত ইবাদত রয়েছে। এগুলো নবি করিম (স.) যেভাবে আদায় করেছেন, আমাদেরকে করতে বলেছেন, আমরা ঠিক সেভাবেই আদায় করব। এভাবে মানুষ তার জীবনকে পরিচালিত করলে সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও অপরের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি বৃদ্ধি পাবে।

ইবাদতের প্রকারভেদ
ইবাদতকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: ১. ইবাদতে বাদানি বা শারীরিক ইবাদত, ২. ইবাদতে মালি বা আর্থিক ইবাদত, ৩. ইবাদতে মালি ও বাদানি বা শরীর ও অর্থ উভয়ের সংমিশ্রণে ইবাদত। শরীরের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের সাহায্যে যে ইবাদত করা হয় তাকে বলা হয় ইবাদতে বাদানি বা শারীরিক ইবাদত। যথা- দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা ও রমযান মাসে রোযা রাখা। ইবাদতের মধ্যে শারীরিক ইবাদত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থের দ্বারা যে ইবাদত করতে হয় সেগুলোকে বলা হয় ইবাদতে মালি বা আর্থিক ইবাদত। যেমন: যাকাত দেওয়া, সাদাকা ও দানখয়রাত করা ইত্যাদি। উল্লিখিত দুই প্রকার ইবাদত ছাড়াও এমন কিছু ইবাদত আছে যা শুধু শরীর দ্বারা কিংবা অর্থ দ্বারা করা যায় না। বরং শরীর এবং অর্থ উভয়ের প্রয়োজন হয়; যেমন: হজ করা, জিহাদ করা ইত্যাদি।

আল্লাহ তায়ালা যেহেতু আমাদের ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন, তাই সবসময় তাঁর ইবাদতে মশগুল থাকা আমাদের কর্তব্য। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে যে, সবসময় কি ইবাদত করা সম্ভব? হ্যাঁ, দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা ইবাদত করা সম্ভব। যেমন আমরা খেতে বসলে যদি 'বিসমিল্লাহ' বলে খাওয়া শুরু করি, তবে যতক্ষণ খাওয়ার মধ্যে থাকব ততক্ষণ আল্লাহর রহমত পেতে থাকব। এটিই ইবাদত। পড়ার সময় যদি 'বিস্মিল্লাহ' বলে পড়া শুরু করি তবে যতক্ষণ পর্যন্ত লেখাপড়া করব, ততক্ষণই তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। স্কুলে যাবার সময় 'বিস্মিল্লাহ্' বলে যাত্রা শুরু করলে রাস্তার সকল বিপদাপদ থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেন। একজন অন্ধলোক রাস্তা পার হতে পারছে না, তাকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিলে তাও আল্লাহর নিকট ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। এমনিভাবে সবসময় আমরা ইবাদতে মশগুল থাকতে পারি। ইবাদত করলে আল্লাহ খুশি হন। এতে দুনিয়ার জীবন সুখময় হয়। পরকালে পরম শান্তিময় স্থান জান্নাত লাভ করা যায়। আর যারা ইবাদত করে না, আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলে না, আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। তারা দুনিয়াতে শান্তি পায় না। পরকালেও তাদেরকে জাহান্নামের কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।

কাজ : শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে পাঠ্যপুস্তকের আলোচনার বাইরে আর কোন কোন কাজ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে তার তালিকা তৈরি করবে।
Content added By

নাজাসাত ( التَّجَاسَةُ ) (পাঠ ২)

217

'নাজাসাত' আরবি শব্দ। এর অর্থ অপবিত্রতা। এটি তাহারাত বা পবিত্রতার বিপরীত। শরীর থেকে যেসব জিনিস বের হওয়ার কারণে শরীর অপবিত্র হয়ে যায় অথবা যে সব দ্রব্য কোনো পবিত্র বস্তুতে লাগলে তা অপবিত্র হয়ে যায়, তাকে নাজাসাত বা অপবিত্রতা বলা হয়। যেমন: মল-মূত্র, রক্ত ইত্যাদি। নাজাসাতের কারণে শরীর, কাপড় ও ব্যবহারিক জিনিসপত্র অপবিত্র হয়ে যায়। এ অবস্থায় তা পবিত্র করা একান্ত জরুরি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَأَطَهَّرُوا

অর্থ: আর তোমরা যদি অপবিত্র হয়ে যাও তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৬)
নাজাসাত বা অপবিত্রতার প্রকারভেদ
নাজাসাত দুই প্রকার:

১. নাজাসাতে হাকিকি বা প্রকৃত অপবিত্রতা
২. নাজাসাতে হুকমি বা অপ্রকৃত অপবিত্রতা

নাজাসাতে হাকিকি: নাজাসাতে হাকিকি বলতে ঐ সকল অপবিত্র বস্তুকে বোঝায় যেগুলো প্রকৃতিগতভাবেই অপবিত্র এবং ইসলামি শরিয়ত সেগুলোকে অপবিত্র ঘোষণা করে। ঐ সকল অপবিত্র বস্তুকে মানুষ অপছন্দ করে। যেমন: প্রস্রাব, পায়খানা, রক্ত ইত্যাদি। ইসলাম এসব থেকে শরীরকে পবিত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
নাজাসাতে হুকমি: নাজাসাতে হুকমি হচ্ছে ঐ সকল অপবিত্রতা যা দেখা যায় না কিন্তু ইসলামি বিধানে তা নাজাস- াত বা অপবিত্র বলে গণ্য। যেমন-ওযু ভঙ্গ হওয়া, গোসলের প্রয়োজন হওয়া ইত্যাদি। উলেখ্য যে, উভয় প্রকার অপবিত্রতা থেকে শরীর পবিত্র রাখা একান্ত প্রয়োজন।

অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনের উপায়সমূহ
আলাহ তায়ালা নিজে পবিত্র, তাই তিনি পবিত্রতা অর্জনকারী ব্যক্তি ও পবিত্র বস্তুকে পছন্দ করেন। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় প্রকার পবিত্রতা অর্জন করা জরুরি। ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী পবিত্রতা অর্জনের উপায়গুলো হলো-
১. ওযু: শরীর পবিত্র করার নিয়তে পাক-পবিত্র পানি দিয়ে শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী মুখমন্ডল, দুই হাত (কনুই সহ) ও দুই পা (টাখনু সহ) ধৌত করা এবং মাথা মাস্হ করার নাম ওযু। যে পানি দিয়ে ওযু করা হবে তা অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। যেমন-নদী, খাল, পুকুর, কূপ, ঝরনা, নলকূপ বা শহরে সরবরাহ করা পানি।
২. গোসল: পবিত্র পানি দিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে পুরো শরীর ধৌত করাকে গোসল বলে। গোসলের মাধ্যমে পুরো শরীর পবিত্র হয়ে যায়।
৩. তায়াম্মুম: পানি পাওয়া না গেলে অথবা অসুস্থ অবস্থায় রোগী পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তু দ্বারা মুখমন্ডল ও হাত মাস্হ করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করাকে তায়াম্মুম বলে।
ইসলাম মনের পবিত্রতার ওপর খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে। খ্যাতিমান ইসলামি পন্ডিতগণ মনের কতিপয় মৌলিক রোগ চিহ্নিত করেছেন। তা হলো লোভ, উচ্চাশা, রাগ, মিথ্যা বলা, গিবত (পরনিন্দা), কার্পণ্য, অহংকার, রিয়া (লোক দেখানো), হাসাদ (হিংসা)। এ পাপগুলো থেকে বেঁচে থাকলে মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। এ ছাড়া ইসলামের ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাবগুলো যথাযথভাবে আদায়ের মাধ্যমে মনের পবিত্রতা অর্জন করা যায়। কোনো মুমিন যদি ইবাদাতের পাশাপাশি হালাল খাদ্য গ্রহণ করেন, হারাম থেকে বেঁচে থাকেন, কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং সদা আল্লাহর যিকির (স্মরণ) করেন তবে তাঁর অন্তর পবিত্র থাকবে। এবার আমরা পবিত্র থাকার লক্ষ্যে ওযু, গোসল এবং তায়াম্মুমের নিয়মগুলো জেনে নেবো।

কাজ: শিক্ষার্থীরা চার-পাঁচজনের দলে বিভক্ত হয়ে প্রত্যেক দল প্রকৃত অপ্রবিত্রতার ও অপ্রকৃত অপবিত্রতার একটি তালিকা ছক আকারে লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
Content added By

পবিত্রতা ( الطَّهَارَةُ ) (পাঠ ৩)

553

পবিত্রতার আরবি প্রতিশব্দ 'তাহারাতুন'। ওযু, গোসল ইত্যাদির মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা যায়। ইবাদতের জন্য পবিত্র থাকা একান্ত প্রয়োজন। পবিত্র না হয়ে নামায আদায় করা যায় না। এ প্রসঙ্গে মহানবি (স.) বলেন, 'পবিত্রতা ব্যতীত নামায কবুল হয় না এবং আত্মসাতের মাল দ্বারা সাদাকা (দান) হয় না।' (মুসলিম)
পবিত্র থাকলে শরীর সুস্থ থাকে। মন প্রফুল্ল থাকে। লেখাপড়া ও কাজকর্মে মন বসে। আল্লাহ তায়ালাও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَهِّرِينَ

অর্থ: "আর উত্তমরূপে পবিত্রতা সম্পাদনকারীদের আল্লাহ ভালোবাসেন।" (সূরা আত্-তাওবা, আয়াত: ১০৮)
রাসুলুল্লাহ (স.) স্বয়ং পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত ছিলেন। তিনি তাঁর উম্মতকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছেন এবং পবিত্র থাকার জন্য বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহানবি (স.) বলেন, 'পবিত্রতা ইমানের অংশ।' (মুসলিম)

পবিত্রতার প্রকারভেদ
পবিত্রতা দুই প্রকার: ১. অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা, ২. বাহ্যিক পবিত্রতা।
অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা
হৃদয়কে যাবতীয় শিরক, রিয়া, গিবত ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখার নাম অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা।
বাহ্যিক পবিত্রতা
শরিয়তের বিধিমোতাবেক ওযু, গোসল ইত্যাদির মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনকে বাহ্যিক পবিত্রতা বলে।
পবিত্রতা ও অপবিত্রতার মানদণ্ড হচ্ছে শরিয়ত। নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি বা অভিরুচি অনুযায়ী এ বিষয়ে কিছু কমবেশি করার কারো অধিকার নেই। কেবল সেসব বস্তুই পবিত্র যাকে শরিয়ত পবিত্র বলেছে। আর সেসব বস্তু অপবিত্র যাকে শরিয়ত অপবিত্র বলেছে। সুতরাং শরিয়তের বিধিমোতাবেক পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। নিজের ধ্যানধারণা ও রুচির বশীভূত হয়ে পবিত্রতা ও অপবিত্রতার কোনো মানদণ্ড ঠিক করা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

مَا يُرِيدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ

অর্থ: "আল্লাহ তোমাদের উপর কোনো অসুবিধা রাখতে চান না। বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান।" (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৬)

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে পবিত্র থাকার উপায়গুলো দলীয় আলোচনার পর পোস্টার পেপারে লিপিবদ্ধ করবে এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
Content added By

ওযু ( الْوُضُوءُ ) (পাঠ ৪)

163

ওযু আরবি শব্দ। এর অর্থ পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, উজ্জ্বলতা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়- শরীর পবিত্র করার নিয়তে পবিত্র পানি দিয়ে শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধোয়ার নামই ওযু।

ওযুর গুরুত্ব
ওযুর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বর্ণনা করে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
“যারা ইমান এনেছ জেনে রেখো, যখন তোমরা নামাযের জন্য দাঁড়াবে তার আগে নিজেদের মুখমণ্ডল ধুয়ে নেবে, তোমাদের দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেবে, মাথা মাসেহ করবে এবং উভয় পা গিরাসহ ধুয়ে নেবে।” (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৬)
ভালোভাবে ওযু করলে মন প্রফুল্ল থাকে। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে। ইবাদতেও একাগ্রতা আসে। এ প্রসঙ্গে মহানবি (স.) বলেন, 'আমি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে চিনতে পারব।' জনৈক সাহাবি প্রশ্ন করলেন, 'হে আল্লাহর রাসুল কোটি কোটি মানুষের মধ্যে আপনি কীভাবে আমাদের চিনবেন?' নবি করিম (স.) উত্তরে বললেন, 'ওযুর ফলে আমার উম্মতের মুখমণ্ডল এবং হাত-পা উজ্জ্বলতায় ঝক্কক্ করবে। তাতেই আমি আমার উম্মতকে চিনতে পারব।' (বুখারি ও মুসলিম)। কাজেই ওযুর ফজিলত বা মর্যাদা পাওয়ার আশায় আমাদের অতি উত্তমরূপে ওযু করতে হবে। ওযু পরিপূর্ণ হলে ইমাম ও মুক্তাদি উভয়ের নামাযই পরিশুদ্ধ হয়। আর ওযু অপরিপূর্ণ হলে নামাযে পরিপূর্ণতা আসে না।

ওযুর নিয়ম
মনে মনে পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করে বিস্মিল্লাহ্ বলে প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে তিনবার কুলি করতে হবে। রোযা না থাকলে তিনবারই গড়গড়া করে কুলি করতে হবে। এরপর নাকে পানি দিয়ে তিনবার নাক পরিষ্কার করতে হবে। তারপর তিনবার সমস্ত মুখমণ্ডল এমনভাবে ধৌত করতে হবে যাতে চুল পরিমাণ স্থানও শুকনো না থাকে। দাড়ি ঘন হলে খিলাল করতে হবে। এরপর দুই হাত কনুইসহ ধৌত করতে হবে। হাতে ঘড়ি, আংটি ইত্যাদি থাকলে তা নাড়াচাড়া করতে হবে যেন সবখানে পানি পৌঁছে যায়। তারপর দুই হাত ভিজিয়ে মাথা এবং কান মাসেহ করতে হবে। মাসেহ করার সময় পুরো দুই হাত দিয়ে কপালের চুলের গোড়া থেকে পিছন দিকে ঘারসহ সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করতে হবে। তারপর দুই হাতের তালু পিছন দিক থেকে সামনের দিকে টেনে সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করতে হবে। মাসেহ করার পর দুই পা টাখনু-সহ ভালো করে ধৌত করতে হবে যাতে একটু জায়গাও বাকি না থাকে। ওযুর কাজগুলো পরপর করে যেতে হবে। অর্থাৎ এক অঙ্গের পর অন্য অঙ্গ সঙ্গে সঙ্গে ধৌত করতে হবে। অনেকক্ষণ থেমে থেমে করা যাবে না।

ওযুর ফরজ
ওযুর ফরজ চারটি। এ চারটির মধ্যে কোনো একটি বাদ পড়লে ওযু হবে না।
১. মুখমণ্ডল একবার ধৌত করা।
২. উভয় হাত কনুইসহ একবার ধোয়া।
৩. মাথার এক-চতুর্থাংশ একবার মাসেহ করা।
৪. উভয় পা গিরাসহ একবার ধোয়া।

ওযু ভঙ্গের কারণ
১. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হলে।
২. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা ছাড়াও শরীরের যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো অপবিত্র বস্তু বের হয়ে গড়িয়ে গেলে (যেমন: রক্ত, পুঁজ ইত্যাদি)।
৩. থুথু, কাশি ব্যতীত বমির সাথে রক্ত, পুঁজ, খাদ্য অথবা অন্য কিছু বের হলে এবং মুখভর্তি বমি হলে।
৪. থুথুর সাথে বেশি পরিমাণ রক্ত এলে।
৫. চিত হয়ে, কাত হয়ে অথবা হেলান দিয়ে ঘুমালে।
৬. বেহুশ হলে।
৭. পাগল হলে।
৮. নেশাগ্রস্ত হলে।
৯. নামাযে অট্টহাসি হাসলে।

কাজ : শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই শ্রেণিতে শিক্ষকের নির্দেশনায় ওযু করার উপকরণের মাধ্যমে অথবা প্রতীকী উপকরণের সাহায্যে ওযু করার নিয়ম অনুশীলন করবে।
Content added By

তায়াম্মুম ( التَّيْهُمُ ) (পাঠ ৫)

146

তায়াম্মুম আরবি শব্দ। এর অর্থ ইচ্ছা করা। ইসলামি পরিভাষায় পবিত্র মাটি বা ঐ জাতীয় পবিত্র বস্তু (যেমন: পাথর, চুনাপাথর, বালি ইত্যাদি) দ্বারা পবিত্র হওয়ার নিয়তে মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ্ করাকে তায়াম্মুম বলে। তায়াম্মুম ওযু ও গোসল উভয়ের পরিবর্তে করা যায়। তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্র হওয়ার অনুমতি উম্মতে মুহাম্মাদির (স.) জন্য আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ অনুগ্রহ। বস্তুত পবিত্রতা অর্জনের প্রকৃত মাধ্যম হলো পানি। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি সরবরাহ করে রেখেছেন। তথাপি এমন অবস্থাও সৃষ্টি হতে পারে যে, পানি পাওয়া যাচ্ছে না অথবা পাওয়া গেলেও পানি ব্যবহারে রোগবৃদ্ধি বা প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে। এসব অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা মাটি দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের অনুমতি দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "আর তোমরা যদি পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কষ্ট দিতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।" (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৬)

তায়াম্মুমের ফরজ
তায়াম্মুমের ফরজ তিনটি। যথা-
১. পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা।
২. পবিত্র মাটি দিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করা।
৩. উভয় হাত পবিত্র মাটি দিয়ে কনুইসহ মাসেহ করা।

তায়াম্মুম করার নিয়ম
প্রথমে নিয়ত করে 'বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম' পড়বে। তারপর দুই হাতের তালু একটু প্রসারিত করে পবিত্র মাটি বা ঐ জাতীয় পবিত্র বস্তু; যেমন: পাথর, চুনাপাথর, বালি ইত্যাদিতে দুই হাত লাগিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল একবার মাসেহ করবে। পুনরায় দুই হাত মাটিতে লাগিয়ে উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করবে। হাতে কোনো ঘড়ি বা অন্য কোনো জিনিস থাকলে তা সরিয়ে তার নিচেও মাসেহ করতে হবে।
তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ
যেসব কারণে ওযু ভঙ্গ হয় সেসব কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়। যেসব কারণে গোসল ওয়াজিব হয়, সেসব কারণে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়। পানি পাওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম ভেঙে যায়। কোনো রোগের কারণে তায়াম্মুম করা হলে, সে রোগ দূর হওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম ভেঙে যায়।

কাজ: শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই শ্রেণিতে শিক্ষকের নির্দেশনায় তায়াম্মুম করার পদ্ধতি অনুশীলন করবে।
Content added By

গোসল ( الْغُسْلُ ) (পাঠ ৬)

291

'গোসল' আরবি শব্দ। এর অর্থ ধৌত করা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় পবিত্রতা অর্জন ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দ্বারা সমস্ত শরীর ধোয়াকে গোসল বলে।

গোসলের ফরজ
গোসলের ফরজ তিনটি। যথা-
১. গড়গড়া করে কুলি করা।
২. নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো।
৩. সমস্ত শরীর পানি দিয়ে ধোয়া।

গোসলের নিয়ম
প্রথমে ডান হাতে পানি নিয়ে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ভালো করে ধৌত করতে হবে। তারপর শরীরের কোথাও অপবিত্র বস্তু লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করতে হবে। এরপর ভালোভাবে ওযু করতে হবে। কুলি করার সময় কণ্ঠদেশে এবং নাকের ভিতরে পানি ভালো করে পৌঁছাতে হবে। ওযুর পর মাথায় এমনভাবে পানি ঢালতে হবে যেন চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছে যায়। এরপর ডান কাঁধে তারপর বাম কাঁধে পানি ঢেলে সমস্ত শরীর ধৌত করতে হবে যেন শরীরের কোনো অংশ শুকনো না থাকে। সর্বশেষে পা ধুতে হবে। এরপর সমস্ত শরীর কোনো কাপড় বা গামছা দিয়ে মুছে শুকনো কাপড় পরতে হবে।

কাজ: ‘পবিত্র হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে গোসল।’ এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে দলে ভাগ হয়ে বিতর্ক করবে।
Content added By

সালাত ( الصَّلُوةُ ) (পাঠ ৭)

129

'সালাত' আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ দোয়া, রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় আরকান আহকামসহ বিশেষ নিয়ম ও নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর ইবাদতের নাম সালাত বা নামায। আল্লাহর নিকট বান্দার আনুগত্য প্রকাশের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে নামায। ইসলামের পাঁচটি রুকন বা স্তম্ভের মধ্যে নামায দ্বিতীয় গুরুত্বপর্ণ রুকন। হাদিসে আছে, 'ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (স.) তার (আল্লাহ তায়ালার) বান্দা ও রাসুল, নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত আদায় করা, হজ করা এবং রমযান মাসে রোযা রাখা।'
(বুখারি ও তিরমিযি)

পবিত্র কুরআন মজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَأَقِيمُوا الصَّلُوةَ وَآتُوا الزَّكوة

অর্থ: "এবং তোমরা নামায কায়েম কর ও যাকাত আদায় কর।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৪৩) নামায মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। যেমন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মজিদে ঘোষণা করেন-

إِنَّ الصَّلُوةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ ،

অর্থ: "নিশ্চয়ই নামায মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।" (সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত: ৪৫)

নামায আদায়কারী দুনিয়াতে মর্যাদা পাবে। আখিরাতে পাবে জান্নাত। এ প্রসঙ্গে মহানবি (স.) বলেন, 'নামায বেহেশতের চাবি।' কারো হাতে কোনো ঘরের চাবি থাকলে যেমন অতি সহজেই ঘরে প্রবেশ করতে পারে। তেমনি যে ব্যক্তি নামায কায়েম করে সে অতি সহজেই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। নামায অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নামাযের মাধ্যমে মুমিনের গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, 'এ কথার মধ্যে তোমাদের কী মত? যদি তোমাদের কারো বাড়ির দরজায় একটি প্রবাহিত নদী থাকে, যার মধ্যে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে। তাহলে তার দেহে কোনো ময়লা বাকি থাকবে কি?' সাহাবিগণ (রা.) বললেন, 'তার কোনো ময়লা বাকি থাকবে না।' তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, 'এটাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের উদাহরণ যা দ্বারা যাবতীয় গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হয়।' (বুখারি ও মুসলিম)

মহানবি (স.) আরও বলেন, 'যে ব্যক্তি নামাযের হেফাজত করবে কিয়ামতের দিন তার জন্য নামায নুর, দলিল ও নাজাত হবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের হেফাজত করবে না কিয়ামতের দিন তার জন্য নামায নুর, দলিল ও নাজাত হবে না। তার হাশর হবে কারুণ, ফেরাউন, হামান ও উবাই ইবনে খলফের সঙ্গে।' (আহমাদ ও দারিমি)

এছাড়াও নামাযের আরও কতিপয় গুরুত্ব রয়েছে যা সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণিত হলো:

  • ইসলামে ইমানের পরই নামাযের স্থান।
  • স্বেচ্ছায় নামায ত্যাগ করা কুফর।
  • নামায দীন ইসলামের খুঁটিস্বরূপ।
  • মৃত্যুকালে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সর্বশেষ উপদেশ ছিল নামায ও নারীজাতি সম্পর্কে।
কাজ: 'একজন মানুষ নামাযি হতে পরিবারই মুখ্য ভূমিকা রাখে' এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে বিতর্ক করবে।
Content added By

সালাতের সময়সূচি (أَوْقَاتُ الصلوة ) (পাঠ ৮)

164

যথাসময়ে নামায আদায় করা আল্লাহর আদেশ। সময়মতো নামায আদায় করা ফরজ। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

إِنَّ الصَّلوةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَبًا مَّوْقُوتًا

অর্থ: "নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।" (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩)

সালাতের সময়
ফজর: ফজরের সালাতের সময় আরম্ভ হয় সুবহে সাদিকে হওয়ার সাথে সাথে এবং সূর্য উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এর সময় থাকে। আকাশের পূর্ব দিগন্তে লম্বমান যে আলোর রেখা দেখা দেয় তাকেই বলে সুবহে সাদিক। আলো ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং শেষে সূর্যোদয় ঘটে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, 'সুবহে সাদিকের পর হতে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত ফজর সালাতের সময়।' (মুসলিম)

যোহর: দ্বিপ্রহরের পর সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লেই যোহরের সময় শুরু হয়। প্রত্যেক বস্তুর ছায়া 'ছায়া আসলি' বাদ দিয়ে দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত এই সময় থাকে। কোনো বস্তুর ঠিক দুপুরের সময়ে যে একটু ছায়া থাকে তাকেই 'ছায়া আসলি' বা আসল ছায়া বলে। যেমন এক হাত লম্বা একটি কাঠির আসল ছায়া দুপুরবেলা চার আঙ্গুল ছিল। তারপর ঐ কাঠির ছায়া যখন দুই হাত চার আঙ্গুল হবে তখন যোহরের সময় শেষ হয়ে যাবে। (তিরমিযি)
আসর: যোহরের সময় শেষ হলেই আসরের সময় শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত থাকে। তবে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করলে আসরের নামায আদায় করা মাকরুহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৮)
মাগরিব: সূর্যাস্তের পর থেকে মাগরিবের সময় শুরু হয় এবং পশ্চিম আকাশে যতক্ষণ লালিমা থাকে ততক্ষণ সময় থাকে। মাগরিবের সময় খুবই কম। তাই সময় হওয়ার সাথে সাথেই নামায আদায় করে নেওয়া উত্তম।
এশা: মাগরিবের সময় শেষ হওয়ার পর এশার নামাযের সময় শুরু হয় এবং সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত থাকে। তবে রাতের প্রথম প্রহরের মধ্যে এশার নামায আদায় করা উত্তম। রাত দ্বিপ্রহরের পর আদায় করা মাকরুহ। (তিরমিযি)
বিতর: বিতর-এর আসল সময় শেষরাত। তবে এশার নামাযের সাথেও আদায় করা যায়। কিন্তু এশার আগে পড়া যায় না। (তিরমিযি)

কাজ: শিক্ষার্থীরা 'সালাত আদায় অত্যাবশ্যক কেন' এ বিষয়ে পাঁচটি বাক্য লিখে শিক্ষককে দেখাবে।
Content added By

সালাত আদায়ের নিয়ম (পাঠ ৯)

208

প্রতিটি কাজেরই একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। নিয়মমতো কাজ করলে সুফল পাওয়া যায়। নামায একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নামায মহানবি (স.) প্রদর্শিত পন্থায় আদায় করা অত্যন্ত জরুরি। এ প্রসঙ্গে মহানবি (স.) বলেন, 'তোমরা নামায আদায় কর যেমনিভাবে আমাকে আদায় করতে দেখেছ।' (বুখারি)
কোনো প্রকার ভুল হলে নামাযের ক্ষতি হয়। এতে বান্দার গুনাহ হয়। বিনীত ও একাগ্রচিত্তে সালাত আদায় করতে হয়। লোকদেখানো কিংবা উদাসীনভাবে আদায়কৃত সালাত আল্লাহ কবুল করেন না।
আল্লাহ বলেন-

"সুতরাং দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য যারা তাদের সালাত সম্মন্ধে উদাসীন, যারা লোকদেখানোর জন্য ওটা (সালাত) আদায় করে।" (সূরা আল-মাউন, আয়াত: ৪-৬)
নামায আদায়কালে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে, নামাযের শর্তগুলোর কোনোটাই যেন বাদ না পড়ে। পবিত্র হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। মনে করতে হবে যে, আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি আমাকে দেখছেন।

দুই, তিন ও চার রাকআত বিশিষ্ট নামায আদায়ের নিয়মে কিছুটা তারতম্য আছে। নিচে এর বিবরণ দেওয়া হলো:
দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায়ের নিয়ম
কিবলামুখী হয়ে নিয়ত করে দুই হাত কানের লতি পর্যন্ত তুলে 'আল্লাহু আকবার' বলে নাভির নিচে হাত বাঁধব। তবে নারীগণ হাত তুলবে কাঁধ পর্যন্ত এবং বাম হাতের পিঠের ওপর ডান হাত রেখে বুকের উপর হাত বাধবে। নিয়ত মনে মনে করলেই চলবে। তবে মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। এরপর 'সানা' পড়ব। এরপর 'আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম, বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম' বলে সূরা ফাতিহা পড়ব। ফাতিহা পড়ে মনে মনে 'আমিন' বলব। এরপর অন্য কোনো সূরার কমপক্ষে বড় এক আয়াত অথবা ছোট তিন আয়াত কিংবা একটি সূরা পড়ব। তারপর 'আল্লাহু আকবার' বলে রুকু করব। রুকুতে কমপক্ষে তিনবার 'সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম' বলব। তারপর 'সামি আল্লাহুলিমান হামিদাহ্' বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব। দাঁড়ানো অবস্থায় 'রাব্বানা লাকাল হাম্দ' বলব। তারপর 'আল্লাহু আকবার' বলে সিজদাহ্ করব। সিজদায় অন্তত তিনবার 'সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা' বলব। তারপর 'আল্লাহু আকবার' বলে সোজা হয়ে বসব। আবার 'আল্লাহু আকবার' বলে দ্বিতীয় সিজদাহ করব। এবারও সিজদায় কমপক্ষে তিনবার 'সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা' বলব। এরপর 'আল্লাহু আকবার' বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব। এভাবে প্রথম রাকআত শেষ হবে। এখন দ্বিতীয় রাকআত শুরু হলো। 'বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম' বলে সূরা ফাতিহা পড়ব। তারপর পূর্বের মতো সূরা মিলাব। তারপর প্রথম রাকআতের মতো রুকু ও সিজদাহ্ করে সোজা হয়ে বসব। তাশাহ্হুদ, দরুন্দ ও দোয়া মাসূরা পড়ে ডানে ও বামে মুখ ফিরিয়ে 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ' বলব। এইভাবে দুই রাকআত বিশিষ্ট নামায শেষ হবে।

তিন রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায়ের নিয়ম
তিন রাকআত বিশিষ্ট ফরজ নামাযে দ্বিতীয় রাকআতের পর বসা অবস্থায় শুধু তাশাহহুদ পড়ব। তারপর তাকবির বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব। এরপর বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ব। অন্য কোনো সূরা পড়ব না। এরপর পূর্বের মতো রুকু, সিজদাহ করব। সিজদাহ পর সোজা হয়ে বসে তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসূরা পড়ে ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করব।
চার রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায়ের নিয়ম
চার রাকআত বিশিষ্ট ফরজ নামাযে দ্বিতীয় রাকআতের পর বসা অবস্থায় শুধু তাশাহহুদ পড়ব। পরে তৃতীয় রাকআতের জন্য তাকবির বলে উঠে দাঁড়াব। এরপর বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ব। তারপর রুকু-সিজদাহ করে, চতুর্থ রাকআতের জন্য উঠে দাঁড়াব। চতুর্থ রাকআতে তৃতীয় রাকআতের মতো সূরা ফাতিহা পড়ে রুকু, সিজদাহ করার পর বসে তাশাহহুদ, দরুন্দ ও দোয়া মাসূরা পড়ে ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করব। ওয়াজিব, সুন্নত বা নফল নামায হলে তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকআতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়ব।

কাজ: শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই উপকরণের মাধ্যমে নামায আদায়ের নিয়ম শ্রেণিতে অনুশীলন করবে। শিক্ষক মহোদয় সহযোগিতা করবেন।
Content added By

সালাতের ফরজ ( فَرَائِضُ الصَّلُوةِ ) (পাঠ ১০)

282

সালাত (নামায) সহিহ্ বা শুদ্ধ হওয়ার জন্য কতগুলো প্রয়োজনীয় বিষয় রয়েছে। যার কোনো একটি ইচ্ছায়ই হোক আর অনিচ্ছায়ই হোক, বাদ পড়লে নামায বাতিল হয়ে যাবে। নামাযে মোট ফরজ তেরোটি। নামাযের পূর্বে প্রস্তুতিমূলক সাতটি ফরজ রয়েছে। এগুলোকে নামাযের আহকাম বলা হয়।

১. শরীর পবিত্র হওয়া।
২. পরিধানের কাপড় পবিত্র হওয়া।
৩. নামাযের স্থান পবিত্র হওয়া। কমপক্ষে দাঁড়ানোর জায়গা থেকে সিজদাহর জায়গা পর্যন্ত পবিত্র হতে হবে।
৪. সতর ঢাকা। পুরুষের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং নারীদের মুখমণ্ডল, দুই হাতের কব্জি, পায়ের পাতা ছাড়া সমস্ত শরীর ঢাকা।
৫. কিবলামুখী হওয়া। কিবলামুখী হয়ে সালাত আদায় করতে হবে। কিবলা অজানা অবস্থায় অথবা জানার কোনো উপায় না থাকলে নিজের প্রবল ধারণা অনুযায়ী কিবলা নির্ধারণ করে নামায আদায় করবে।
৬. নামাযের সময় হওয়া।
৭. নিয়ত করা। যে ওয়াক্তের নামায আদায় করবে মনে মনে সেই ওয়াক্তের নামাযের নিয়ত করা। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ভাষায় নিয়ত করতে পারবে।

নামাযের ভিতরে ছয়টি ফরজ রয়েছে। এগুলোকে নামাযের আরকান বলা হয়।

১. তাকবিরে তাহরিমা বা আল্লাহু আকবার বলে নামায আরম্ভ করা।
২. দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা। দাঁড়াতে অক্ষম হলে বসে এবং বসতে সক্ষম না হলে শয়নাবস্থায় ইশারায় নামায আদায় করতে হবে।
৩. সূরা বা আয়াত তিলাওয়াত করা।
৪. রুকু করা।
৫. সিজদাহ্ করা।
৬. শেষ বৈঠক। যে বৈঠকের মধ্যে তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসূরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করা হয় তাকেই শেষ বৈঠক বলে।

কাজ: শিক্ষার্থীরা নামাযের আহকাম ও আরকানের সংক্ষিপ্ত শিরোনাম পোস্টার পেপারে লিখবে। এরপর শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

সালাতের ওয়াজিব
নামাযের ওয়াজিব বলতে এমন সব জরুরি বিষয় বোঝায় যার কোনো একটি ভুলবশত ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু দ্বারা নামায শুদ্ধ করতে হয়। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দিলে নামায ভঙ্গ (ফাসিদ) হয়ে যায় এবং পুনরায় নামায আদায় করতে হয়।
নামাযের ওয়াজিব চৌদ্দটি। এগুলো নিম্নরূপ:
১. প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহা পড়া।
২. সূরা ফাতিহার সাথে কোনো একটি সূরা বা সূরার অংশবিশেষ পাঠ করা। অর্থাৎ আয়াত ছোট হলে কমপক্ষে তিনটি আয়াত এবং বড় হলে কমপক্ষে একটি আয়াত পাঠ করা।
৩. রুকু, সিজদাহ্ ও তিলাওয়াতের আয়াতগুলোর ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা।
৪. নামাযের রুকনগুলো সঠিকভাবে আদায় করা।
৫. রুকু করার পর সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
৬. দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা।
৭. প্রথম বৈঠক অর্থাৎ তিন বা চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযে দুই রাকআত পড়ার পর তাশাহহুদ পড়ার জন্য বসা।
৮. তাশাহহুদ পাঠ করা।
৯. ইমামের জন্য উচ্চস্বরে তিলাওয়াতের স্থলে উচ্চস্বরে এবং চুপে চুপে তিলাওয়াতের স্থলে চুপে চুপে তিলাওয়াত করা।
১০. বিতর নামাযে দোয়া কুনুত পাঠ করা।
১১. নামাযের মধ্যে সিজদাহ্র আয়াত পড়লে তিলাওয়াতে সিজদাহ্ করা।
১২. সিজদাহ্র মধ্যে উভয় হাত ও হাঁটু মাটিতে রাখা।
১৩. দুই ঈদে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা।
১৪. আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে নামায শেষ করা।

কাজ: শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হবে এবং প্রত্যেক দল নামাযের ওয়াজিবগুলোর নাম পোস্টার পেপারে লিখবে এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

সালাতের সুন্নত
রাসুলুল্লাহ (স.) নামাযের মধ্যে ফরজ ওয়াজিব ছাড়াও কিছু আমল বা কাজ করেছেন কিন্তু এগুলো আদায়ের ব্যাপারে ফরজ ওয়াজিবের ন্যায় তাগিদ করেননি। এগুলোকে বলা হয় সুন্নত। যদিও এগুলো ছুটে গেলে নামায নষ্ট হয় না কিংবা সাহু সিজদাহ্ দিতে হয় না, তথাপি এগুলো মেনে চলা উচিত। কারণ রাসুলুল্লাহ (স.) এভাবে নামায আদায় করেছেন এবং অন্যকেও আদায় করতে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, 'তোমরা নামায আদায় কর, যেমনিভাবে আমাকে নামায আদায় করতে দেখেছ।' (বুখারি)
সালাতের সুন্নত একুশটি। এগুলো নিম্নরূপ:
১. তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় পুরুষের কানের লতি ও নারীদের কাঁধ পর্যন্ত দুই হাত উঠানো। ২. তাকবির বলার সময় দুই হাতের আঙ্গুলগুলো খুলে রাখা এবং কিবলামুখী করে রাখা। ৩. নিয়ত করার পর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা। পুরুষের জন্য নাভির নিচে এবং নারীর জন্য বুকের উপর হাত রাখা। ৪. তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় মাথা অবনত না করা। ৫. ইমামের জন্য জোরে তাকবির বলা। ৬. সানা পড়া। ৭. আউযুবিল্লাহ পড়া। ৮. প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পূর্বে মনে মনে বিস্মিল্লাহ্ পড়া। ৯. ফরজ নামাযের তৃতীয়, চতুর্থ রাকআতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়া। ১০. ফাতিহার পর আমিন বলা। ১১. সানা, আউযুবিল্লাহ, আমিন আস্তে বলা। ১২. এক রুকন থেকে অন্য রুকনে যাওয়ার সময় তাকবির বলা। ১৩. রুকু এবং সিজদায় তাসবিহ পড়া। ১৪. রুকুতে মাথা ও কোমর সোজা রাখা এবং দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে উভয় হাঁটু ধরা। ১৫. রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো অবস্থায় ইমামের 'সামি আল্লাহুলিমান হামিদাহ্' ও মুক্তাদির 'রাব্বানা লাকাল হাম্দ' বলা। ১৬. সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু, তারপর দুই হাত, তারপর নাক এবং সর্বশেষ কপাল মাটিতে রাখা। ১৭. বসার সময় বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা এবং ডান পা খাড়া রাখা। ১৮. তাশাহহুদে লা-ইলাহা এর 'লা' উচ্চারণের সময় শাহাদাত আঙ্গুল উঠানো। ১৯. শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরুদ পড়া। ২০. দরুদের পর দোয়া মাসূরা বা এই জাতীয় কোনো দোয়া পড়া। ২১. প্রথমে ডানে এবং পরে বামে সালাম ফেরানো।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে এবং প্রত্যেক দল নামাযের সুন্নতগুলো পোস্টার পেপারে লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

সালাতের মুস্তাহাব
নামাযে এমন কিছু কাজ আছে যা মেনে চললে সাওয়াব পাওয়া যায়, কিন্তু ছেড়ে দিলে গুনাহ হয় না। এগুলোকে বলা হয় মুস্তাহাব। নামাযের কতিপয় মুস্তাহাব নিচে দেওয়া হলো:
১. নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা। ২. রুকুর সময় পায়ের উপর, সিজদাহ্র সময় নাকের উপর এবং বসা অসস্থায় কোলের উপর দৃষ্টি রাখা। ৩. হাঁচি এলে, হাই উঠলে, কাশি এলে যথাসম্ভব চেপে রাখার চেষ্টা করা। ৪. ধীরস্থিরভাবে কুরআন পাঠ করা। ৫. সিজদার সময় উভয় হাতের মধ্যস্থানে মাথা রাখা। ৬. মাগরিবের নামাযে ছোট সূরা পাঠ করা। ৭. একা একা নামায আদায়কালে রুকু, সিজদায় তাসবিহ তিনবারের বেশি (পাঁচ, সাত, নয় ইত্যাদি) পড়া।

সালাত ভঙ্গ হওয়ার কারণ
নামাযের শুরুতে আমরা নিয়ত করে 'আল্লাহু আকবার' বলে হাত বাঁধি, একে বলা হয় তাকবিরে তাহরিমা। এই তাকবির বলার পর অন্য কোনো কাজ বা কথা বলা হারাম হয়ে যায়। যদি কেউ এমন করে ফেলে তবে নামায বাতিল হবে। কী কী কাজ করলে নামায ভেঙে যায় তা আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন।
নামায ভঙ্গ হওয়ার কারণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. নামাযের মধ্যে কাউকে সালাম দিলে এবং সালামের উত্তর দিলে। ২. নামাযের মধ্যে কথা বললে।
৭. ব্যথা বা রোগের কারণে উহ্ আহ্ এরূপ শব্দ করলে। ৮. কুরআন মজিদ দেখে পড়লে। ৯. কিবলার দিক থেকে সীনা ঘুরালে। ১০. দুই হাত দিয়ে কোনো কাজ করলে। ১১. মুক্তাদি ইমাম অপেক্ষা সামনে দাঁড়ালে। ১২. অপবিত্র স্থানে সিজদাহ্ করলে। ১৩. দুনিয়ার কোনো কিছু প্রার্থনা করলে। ১৪. বিনা কারণে বারবার
৩. কিছু খেলে। ৪. কিছু পান করলে। ৫. শব্দ করে হাসলে। ৬. বিপদ বা কষ্টের কারণে উচ্চস্বরে কাঁদলে। কাশি দিলে। ১৫. নামাযের কোনো ফরজ বাদ গেলে। ১৬. কোনো সুসংবাদে 'আলহামদুলিল্লাহ্' বললে। ১৭. কোনো দুঃসংবাদে 'ইন্নালিল্লাহ্' বললে। ১৮. হাঁচি দিয়ে 'আলহামদুলিল্লাহ্' বললে। ১৯. হাঁচির উত্তরে 'ইয়ারহামুকাল্লাহ্' বললে। ২০. নিজের ইমাম ছাড়া অন্য কারো ভুল ধরলে। ২১. আমলে কাসির করলে (এমন কাজ করা যা দেখলে মানুষ মনে করবে, সে নামায পড়ছে না)।
সালাত মাকরুহ হওয়ার কারণ
এমন কিছু কাজ আছে যা করলে নামায নষ্ট না হলেও সাওয়াব কম হয়, সেগুলো সালাতের মাকরুহ কাজ। নিম্নে এমন কতগুলো কাজের কথা উল্লেখ করা হলো:
১. নামাযে বিনা কারণে আঙ্গুল মটকানো। ২. আলসেমি করে খালি মাথায় নামায আদায় করা। ৩. কাপড় ধুলাবালি থেকে বাঁচানোর জন্য গুটিয়ে নেওয়া। ৪. পরনের কাপড়, বোতাম, দাড়ি ইত্যাদি অহেতুক নাড়াচাড়া করা। ৫. ময়লা ও অশালীন পোশাক পরে নামায আদায় করা। ৬. প্রস্রাব-পায়খানা চেপে রেখে নামায আদায় করা। ৭. নামাযে এদিক-ওদিক তাকানো। ৮. সিজদায় দুই হাত কনুই পর্যন্ত বিছিয়ে দেওয়া। ৯. ইমামের মেহরাবের ভিতরে দাঁড়ানো। ১০. প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরা। ১১. আগের কাতারে জায়গা থাকলেও একাকী পিছনে দাঁড়ানো। ১২. ইশারায় সালাম করা। ১৩. শুধু কপাল অথবা শুধু নাক মাটিতে ঠেকিয়ে সিজদাহ্ করা। ১৪. বিনা কারণে শুধু ইমামের উচুস্থানে দাঁড়ানো। ১৫. বিনা কারণে চারজানু হয়ে বসা। ১৬. চোখ বন্ধ করে নামায আদায় করা। ১৭. তিলাওয়াত পূর্ণ না করেই রুকুর জন্য ঝুঁকে পড়া। ১৮. সিজদাহর সময় পা মাটি থেকে উপরে উঠানো। ১৯. নামাযে আয়াত, তাসবিহ আঙ্গুল দিয়ে গণনা করা। ২০. তিলাওয়াতে অসুবিধা হয় মুখে এমন কোনো জিনিস রাখা।

সালাতের নিষিদ্ধ সময়
তিন সময় নামায পড়া নিষিদ্ধ: ১. ঠিক সূর্যোদয়ের সময়। ২. ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়। ৩. সূর্যাস্তের সময়, তবে কোনো কারণে ঐ দিনের আসরের নামায আদায় করা না হলে তা ঐ সময় আদায় করা যাবে কিন্তু মাকরুহ হবে।
সালাতের মাকরুহ সময়
১. ফজরের নামাযের পর সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত। ২. আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত। ৩. ফজরের সময় হলে ঐ সময়ের সুন্নত ছাড়া অন্য কোনো নামায পড়া। ৪. ফরজ নামাযের জন্য যখন তাকবির দেওয়া হয় তখন অন্য নামায শুরু করা। ৫. যখন ইমাম জুমুআর খুতবা দিতে থাকেন তখন কোনো নামায শুরু করা। ৬. এশার নামায মধ্যরাতের পরে পড়া।

কাজ: শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে নামায ভঙ্গ হওয়ার কারণগুলো লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

Content added By

সিজদাহ্ ( السَّجْدَةُ ) (পাঠ ১১)

219

'সিজদাহ্' আরবি শব্দ। এর অর্থ মাথা অবনতকরণ। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য বান্দা তার কপাল জমিনে রাখাকে সিজদাহ্ বলে।

সিজদাহ্র প্রকারভেদ
ফরজ সিজদাহ্: মানুষ নামায আদায়ের সময় যেসব সিজদাহ্ দিয়ে থাকে তাকে ফরজ সিজদাহ্ বলে।
ওয়াজিব সিজদাহ্: ভুলবশত নামাযে কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে এবং সিজদাহর আয়াত তিলাওয়াত করলে যে সিজদাহ্ দিতে হয় তাকে ওয়াজিব সিজদাহ্ বলে।
মুস্তাহাব সিজদাহ্: কোনো নিয়ামতপ্রাপ্ত হলে, বিপদমুক্ত হলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে যে সিজদাহ্ দেওয়া হয় তাকে মুস্তাহাব সিজদাহ্ বলে।
সিজদায়ে সাহু সিজদায়ে সাহু অর্থ ভুলের জন্য সিজদাহ্। ভুলবশত নামাযে ওয়াজিব বাদ পড়লে, তা সংশোধনের জন্য নামাযের শেষ বৈঠকে দুটি সিজদাহ করা হয়, একেই সিজদায়ে সাহু বলে।
সিজদায়ে সাহু আদায় করার নিয়ম
নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর ডান দিকে সালাম ফেরাব। তারপর 'আল্লাহু আকবার' বলে নামাযের সিজদাহর ন্যায় দুটি সিজদাহ্ করে তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসূরা পড়ব। তারপর দুইদিকে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করব। সিজদায়ে সাহু সম্পর্কে মহানবি (স.) বলেন, 'আমি তোমাদের ন্যায় একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। সুতরাং যখন আমি ভুলে যাব তখন তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। যখন তোমাদের কেউ নামাযের মধ্যে সন্দেহ করবে তখন সে গভীর চিন্তা করে সঠিক বিষয়টি ঠিক করে নেবে। অতঃপর এর উপর ভিত্তি করে নামায পূর্ণ করবে এবং সালাম দিয়ে দুটি সিজদাহ্ করবে।' (বুখারি ও মুসলিম)

সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার কারণ
১. ভুলবশত নামাযের কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে। ২. নামাযের কাজগুলো পরপর আদায় করতে বিলম্ব
করলে (যেমন: সূরা ফাতিহা পড়ার পর চুপ করে থাকলে, কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর কোনো সূরা পড়লে)। ৩. কোনো ফরজ আদায় করতে বিলম্ব হলে। ৪. নামায আদায়ে ধারাবাহিকতার ব্যতিক্রম হলে (যেমন: রুকুর আগেই সিজদাহ্ করলে)। ৫. কোনো ফরজ একবারের স্থলে একাধিকবার করলে। ৬. কোনো ওয়াজিবের রূপ পরিবর্তন করলে (যেমন: সরবে তিলাওয়াতের স্থলে নীরবে এবং নীরবে তিলাওয়াতের স্থলে সরবে পড়লে)। মনে রাখা দরকার, প্রথম বৈঠক করতে ভুলে গেলে যদি দাঁড়ানোর পূর্বেই মনে পড়ে তাহলে বসে যাব এবং বৈঠক পূর্ণ করব। আর যদি দাঁড়ানোর পর মনে পড়ে তাহলে বসব না। নামায শেষে সাহু সিজদাহ্ করব।

কাজ: সিজদাহ্ সাহু ওয়াজিব হওয়ার কারণগুলো ছক আকারে লিখে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
Content added By

সিজদায়ে তিলাওয়াত (سَجْدَةُ التَّلَاوَةِ ) (পাঠ ১২)

107

পবিত্র কুরআন মজিদে কতগুলো আয়াত আছে যা পড়লে বা শুনলে সিজদাহ্ করা জরুরি। সিজদাহ্ আদায় না করলে গুনাহগার হবে। হাদিসে আছে, 'যখন কেউ সিজদাহর আয়াত পড়ে সিজদাহ্ করে তখন শয়তান একপাশে বসে বিলাপ করতে থাকে এবং বলে, হায় আফসোস! আদম সন্তানদের সিজদাহর হুকুম দেওয়া হলো, তারা সিজদাহ্ করল এবং জান্নাতের দাবিদার হলো। আর আমাকে সিজদাহর হুকুম দেওয়া হলো আমি অস্বীকার করে জাহান্নামি হলাম।' (মুসলিম)

সিজদায়ে তিলাওয়াতের নিয়ম
কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে সিজদায়ে তিলাওয়াতের নিয়ত করে 'আল্লাহু আকবার' বলে সিজদাহ্ করতে হয়। সিজদাহ্ করার পর 'আল্লাহু আকবার' বলে উঠে দাঁড়াতে হয়। তাশাহহুদ পড়া ও সালাম ফেরানোর প্রয়োজন নেই। সিজদায়ে তিলাওয়াতে একটি সিজদাহ্ করলেই চলবে।
সিজদায়ে তিলাওয়াতের চারটি শর্ত
১. তাহারাত অর্থাৎ পবিত্র হওয়া। ২. সতর ঢাকা। ৩. কিবলামুখী হওয়া। ৪. সিজদায়ে তিলাওয়াতের নিয়ত করা। সিজদায়ে তিলাওয়াতের স্থান
১. সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ২০৬। ২. সূরা রা'দ, আয়াত: ১৫। ৩. সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫০। ৪. সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ১০৯। ৫. সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৮। ৬. সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ১৮, ৭৭। ৭. সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬০। ৮. সূরা আন-নামল, আয়াত: ২৬। ৯. সূরা সাজদাহ, আয়াত: ১৫। ১০. সূরা সোয়াদ, আয়াত: ২৪। ১১. সূরা হা-মীম-আস্-সাজদাহ, আয়াত: ৩৮। ১২. সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৬২। ১৩. সূরা আল-ইনশিকাক, আয়াত: ২১। ১৪. সূরা আল-আলাক, আয়াত: ১৯।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে যাবে এবং সূরার নাম ও আয়াত নম্বরসহ সিজদায়ে তিলাওয়াতের স্থানসমূহ ছক আকারে লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
Content added By

সালাতের নৈতিক শিক্ষা (পাঠ ১৩)

1k

সালাত (নামায) ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর সাথে নৈতিকতা বিষয়টি বিশেষভাবে জড়িত। ইসলামি বিধান অনুযায়ী নামায আদায় করলে একে তো আল্লাহর আইন পালন করা হয়, অপরদিকে বান্দার পার্থিব জীবনেও নৈতিকতার উন্নতি ঘটে। আর কোনো মানুষের নৈতিকতার উন্নতি ঘটলে, দুনিয়াতে যেমনি পাবে সম্মান ও মর্যাদা তেমনি পরকালেও পাবে সুখ-শান্তি।
নিচে নামাযের কতিপয় নৈতিক বিষয় বর্ণনা করা হলো:

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
নামায আদায়কারীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র থাকতে হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে একজন মুমিন যখন নামায আদায় করবে তখন তাকে অবশ্যই ওযু করতে হয়। আর নামাযের পূর্বশর্তসমূহের একটি হলো পবিত্রতা অর্জন করা। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاظَهَرُوا

অর্থ: "যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে পবিত্রতা অর্জন কর।" (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৬)
নামাযের আগে রাসুলুল্লাহ (স.) মিসওয়াক করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যথানিয়মে দাঁত পরিষ্কার করলে মুখে দুর্গন্ধ থাকে না। রোগের আশঙ্কা থেকে নিরাপদ থাকা যায়। তিনি বলেন, 'আমার উম্মতের উপর কষ্টকর না হলে আমি তাদের প্রতি নামাযে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।' (ইবনু মাজাহ)
নামায আদায় করতে হলে দৈনিক পাঁচবার ওযু করতে হয় যা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় অঙ্গকে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখতে সহায়তা করে। এটা নাক, মুখ, চোখ, দাঁত ও পোশাক-পরিচ্ছদ পরিষ্কার রাখার অতুলনীয় কৌশলও বটে। যদি মুসল্লির শরীর, জামাকাপড় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে অন্য মুসল্লির কষ্ট হয় না। বরং সুন্দর ও সুস্থ মন নিয়ে একে অপরের সাথে দাঁড়াতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার এ শিক্ষা নামায থেকেই পাওয়া যায়।

কাজ: শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে প্রত্যেক দল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জনে সালাতের ভূমিকা বিষয়ক একটি অনুচ্ছেদ তৈরি করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

সময়ানুবর্তিতা
নামায নিয়মানুবর্তিতা ও সময়নিষ্ঠা শিক্ষা দেয়। একজন মুমিন ব্যক্তিকে দৈনিক পাঁচবার নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করতে হয়। এতে সে সময়ের প্রতি সচেতন হয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ে জামাআতে নামায অনুষ্ঠিত হয়। কোনো ব্যক্তি সময়মতো জামাআতে নামায আদায় করতে না পারলে সে জামাআতের সাওয়াব হতে বঞ্চিত হবে। কিছু সময় পরই নামায আদায় করতে হয় বলে সময়কে শিথিল করা যায় না। বরং সবসময়ই নামাযের আহবানে সাড়া দেওয়ার জন্য মুমিন ব্যক্তিকে প্রস্তুত থাকতে হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

إِنَّ الصَّلوةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَبًا مَّوْقُوتًا

অর্থ: "নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।" (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩)

প্রতিদিন পাঁচবার নির্ধারিত সময়ে জামাআতে নামায আদায় করা মুমিন বান্দাকে সময়নিষ্ঠ হতে এবং সময়ের প্রতি গুরুত্ব উপলব্ধি করতে উদ্বুদ্ধ করে। অকারণে তিনি সময় নষ্ট করেন না। সমাজের অপরাপর লোকের সাথে সময়মতো কর্তব্য কাজে অভ্যস্ত হন।

এতে সে জীবনের সব কাজেই সময়নিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে। আজকের শিশু আগামী দিনে জাতির কর্ণধার। প্রত্যেক মুসলিম দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ের মাধ্যমে সময়নিষ্ঠ ও কর্তব্যপরায়ণ হলে সে অবশ্যই একটি জাতির অমূল্য মানবসম্পদে পরিণত হবে। সময়মতো নামায আদায় করার মাধ্যমে একজন মুসলিম তার কর্মস্থলে যথাসময়ে কর্তব্য পালনের শিক্ষা গ্রহণ করবে। সে কোনো কাজ আগামী দিনের জন্য ফেলে রাখবে না। বরং যথাসময়ে কঠোর পরিশ্রমে ঐ কাজ সম্পন্ন করবে। দেশের সেনাবিভাগ কঠোর সময়ানুবর্তিতার দিকে মনোনিবেশ করে। এ বিভাগে কর্তব্যরত সৈনিকগণকে নির্ধারিত সময়ে বিউগল বেজে উঠলে শয্যা ত্যাগ করে ইউনিফর্ম পরিধান করে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ বা কাজে অংশগ্রহণ করতে হয়। দেশ রক্ষা ও শত্রুদের সম্ভাব্য আক্রমণের মোকাবিলার জন্যই সৈন্যদেরকে এরূপ শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। অথচ তাদের জীবনে এরূপ দুঃসময় নাও আসতে পারে। কিন্তু মুসলিমগণ অবিরত তাদের কর্তব্য পালনে নিয়োজিত। তাদের চারদিকে ছড়িয়ে থাকা অসৎ ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে তাদের সর্বদা প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে। মহান আল্লাহ দৈনিক পাঁচবার তাঁর মুমিন বান্দাকে আযানের মাধ্যমে নামাযের আহবান জানান। এ আহবানে আল্লাহর সৈনিকগণ দৌড়ে আসবে এবং প্রমাণ করবে, সবসময় ও সকল অবস্থায় তারা আল্লাহর হুকুম পালনে প্রস্তুত।

কাজ : 'সময়ানুবর্তিতাই মানুষের ইহজীবনে সম্মান বাড়ায়'- এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে বিতর্কের আয়োজন করবে।

শৃঙ্খলা
শৃঙ্খলা মানে সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের জীবনে শৃঙ্খলার গুরুত্ব অপরিসীম। রাস্তাঘাটে যানবাহন চালনায় চালককে যেমন একটি বিশেষ নিয়ম মানতে হয়। আর এই নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। তেমনি মানুষের জীবনও একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতির অধীনে আবদ্ধ। বিশৃঙ্খলভাবে জীবন পরিচালনা করলে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। আর যদি সুশৃঙ্খলভাবে জীবন পরিচালনা করে তাহলে নিজে যেমন উপকৃত হবে তেমনি সমাজের অন্য ব্যক্তিও নিরাপদে থাকবে। শৃঙ্খলার এই শিক্ষা নামায থেকেই পাওয়া যায়।
নামাযে একাকী হোক আর জামাআতবদ্ধ হোক বান্দাকে এক কিবলার দিকেই মুখ ফেরাতে হয়। একই সময়ে নির্দিষ্ট নামায আদায়ের জন্য একই ইমামের পিছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হয়। এভাবে নামায আদায়ের ফলে মুমিনের মাঝে শৃঙ্খলাবোধ, নেতার প্রতি আনুগত্যবোধ গড়ে ওঠে। সমাজে কোনো সমস্যা দেখা দিলে, সকলে মিলেমিশে মীমাংসা করার শিক্ষা নামাযের মাধ্যমে লাভ করা যায়।

কাজ: নামায আদায়ের মাধ্যমে একজন মানুষ তার কর্মস্থলেও সুশৃঙ্খল হয়, এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে আলোচনা করবে।

একাগ্রতা
আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অন্যতম উপায় হচ্ছে একাগ্রতার সাথে নামায আদায় করা। নামাযের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নিকট তার আবেদন নিবেদন পেশ করে তৃপ্তি লাভ করতে পারে। আর আল্লাহ তায়ালাও বান্দার আবেদন গ্রহণ করে থাকেন। তাহলে বান্দাকে অবশ্যই বিনয়ের সাথে নামাযে দাঁড়াতে হবে। যেমন: কুরআন মজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
"তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দাঁড়াবে।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৮)
নামায অবস্থায় বান্দার মন এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে অথচ নামাযি টেরও পায় না। কারণ, মানব মন কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করতে অভ্যস্ত। গভীর মনোযোগের সাথে কোনো কাজে নিয়োজিত না হলে মন স্থির থাকে না। তাছাড়া শয়তান হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সে বান্দার সকল ইবাদত বিশেষত নামায নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন বিষয় মনের মধ্যে হাজির করে দেয়। তাই বান্দার মন নামাযে ঠিক থাকে না। এজন্যই বান্দাকে খুশু খুযু (বিনয় ও একাগ্রতা) ও মনের স্থিরতার সাথে নামায আদায় করতে হবে। যেমন পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, "মুমিনগণ অবশ্যই সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী।" (সূরা আল-মু'মিনূন, আয়াত: ১, ২)

কাজ : 'একাগ্রতা হচ্ছে নামায কবুল হওয়ার একমাত্র উপায়।' শিক্ষর্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করবে।

নিয়মানুবর্তিতা
নামায মানুষকে নিয়মানুবর্তিতার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। যে প্রশিক্ষণের মধ্যে মানবজাতির কল্যাণ নিহিত। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষ যা অর্জন করে তা নিচে বর্ণনা করা হলো:
১. মানুষ তার প্রভুর কর্তব্য পালনে অভ্যস্ত হয়।
২. সমাজে কে অনুগত আর কে বিদ্রোহী নামায তা নির্ধারণ করে দেয়।
৩. মানুষকে ইসলামের পরিপূর্ণ আদর্শ মানব হিসেবে গড়ে তোলে এবং তাকে ইসলামের উপর সুদৃঢ় থাকতে সাহায্য করে।
৪. এটি বান্দার চারিত্রিক শক্তিকে আরও দৃঢ় করে।
নামায মানব চরিত্রের দুর্বলতা দূর করে। সাত বছর বয়সে ছেলেমেয়েদের নামাযের তাগিদ দিতে বলা হয়েছে। এতে তারা শিথিলতা করলে দশ বছর বয়সে তাদের প্রহার করে নামাযে অভ্যস্ত করে তোলার নির্দেশ রয়েছে। নামায আদায়ের দায়িত্ব হতে কেউ রেহাই পায় না। নামাযের সময় হলে সকল মুমিন ব্যক্তি সর্বাবস্থায় নামায আদায় করতে বাধ্য।
যে ব্যক্তি নিয়মনীতি মেনে, সময়নিষ্ঠ হয়ে একাগ্রতার সাথে নামায আদায় করবে, সে অবশ্যই হবে একজন দায়িত্ব সচেতন, সুশৃঙ্খল ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি। এমন ব্যক্তি সমাজে শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

সাম্য
জামাআতে নামায আদায়কারী মুসল্লিগণ মসজিদে একত্র হয়ে একই কাতারে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্যে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হয়। সকল মুক্তাদিই ইমামের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে থাকে। তখন ধনী-গরিব, আমির-ফকির, শাসক-শাসিত, ছোটো-বড়ো ভেদাভেদ থাকে না। মসজিদে ইমাম মুয়াযযিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য স্থান নির্ধারিত থাকে না। এটি ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যবাদের মূর্ত প্রতীক। সমাজে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতা করে। সামাজিক যেকোনো সমস্যা সমাধানে একতাবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসে এবং শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য সমাধান দিতে সক্ষম হয়।
সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের এ শিক্ষা একজন মুমিনকে সমাজের অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহানুভূতিশীল, দায়িত্বশীল ও সহযোগিতার মনোভাব সম্পন্ন করে গড়ে তোলে। এতে সমাজে ছোটো-বড়ো, ধনী-গরিব শ্রেণিবৈষম্য ইত্যাদি দূর হয় এবং অতুলনীয় সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এর ফলেই সমাজে কোনো রকম কলহ-বিবাদ থাকতে পারে না। বরং প্রতিষ্ঠিত হয় একটি আদর্শ সমাজ।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে নামায থেকে নিয়মানুবর্তিতা ও সাম্যের যেসব শিক্ষা পাওয়া যায়-তার তালিকা প্রণয়ন করবে।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...